বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) হচ্ছে সেনা, নৌ ও বিমান শাখার ক্যাডেটদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সারির, আধা সামরিক, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। এটি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, জেসিও, এনসিও, বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত। এটিকে বলা হয় সেকেন্ড লাইন ডিফেন্স ফোর্স। জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে চলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক এই সংগঠনটির রয়েছে অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
ব্রিটিশ সরকার ১৯২০ সালে ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করেন ‘ইউনিভার্সিটি কোর’ । ১৯২৩ সালে ভারতীয় দেশরক্ষা আইন- ১৯২৩ অনুসারে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইউনিভার্সিটি ট্রেনিং কোর’ বা ‘ইউটিসি’। একই সালে ইউটিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু করা হয়। ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন ই. গ্রুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক ও ১০০ জন ছাত্রকে প্রথম ইউটিসি কোরের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৯২৮ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কোম্পানিতে উন্নীত করা হয়। এর নাম দেয়া হয় ‘১২ ঢাকা কোম্পানি’। ১৯৪২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপচার্য ড. মাহমুদ হাসানকে অবৈতনিক লে. কর্ণেল পদবী দিয়ে কোম্পানির ভার দেয়া হয়। ১৯৫০ সালে ৬২৫ ক্যাডেট এবং ৪০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে একটি ব্যাটালিয়নে উন্নীত করা হয়। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ইউটিসির কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করে।
হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ বিএনসিসি ইউনিট ময়নামতি রেজিমেন্ট, কুমিল্লার অধীনস্ত ১০ নং ব্যাটালিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি প্লাটুন। এটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে সাবেক উপাধ্যাক্ষ ক্যাপ্টেন নজমুল হক স্যারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। আর এটি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে অধ্যক্ষ মো: শওকত হোসেন স্যারের তত্বাবধানে ও সোহেল আহমেদ, পিইউও এর নেতৃত্বে। এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই গৌরবের সাথে জেলা ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে সুনাম বজায় রেখে দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। এটি ২০২৩ সালে জেলার বিএনসিসি প্লাটুনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্লাটুন নির্বাচিত হয়েছে। এই প্লাটুনের ক্যাডেট সংখ্যা ৩২ জন। প্রতিবছর এই ইউনিটে ১৬ জন করে নতুন ক্যাডেট ভর্তি করা হয়।ক্যাডেট শীপের মেয়াদ ২ বছর।
১। বিএনসিসি ক্যাডেটরা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অফিসার পদে সরাসরি আইএসএসবিতে অংশগ্রহণ করার সুবর্ণ সুযোগ।
২। মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারি খরচ ও ব্যবস্থাপনায় সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ।
৩। সেনাবাহিনীর সাথে বিনা খরচে শীতকালীন যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ও সনদপ্রাপ্তির সুযোগ।
৪। বিএনসিসি ক্যাডেটদের সরাসরি সেনা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
৫। ক্যাডেটদের পারফর্মেন্স অনুযায়ী তাদেরকে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারত ইত্যাদি দেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভিজিটের সুযোগ দেয়া হয়।
৬। দেশের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে তারা সাধারণ মানুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যদি সামরিক বাহিনীর নির্দেশ আসে তবে তারা সম্মুখ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতে পারে।
৭। বিনা খরচে ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, রেজিমেন্ট ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় ক্যাম্প করার সুযোগ। ক্যাম্প শেষে ক্যাডেটদের উপযুক্ত সম্মানী প্রদান করা হয়।
৮। আন্তর্জাতিকমানের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও শৃঙ্খলা বিধানের বিরল অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ।